সমসাময়িকঃ আসলেই কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ফেইসবুক?
বিকেল থেকে ফেইসবুক মেসেজে ভরে যাচ্ছে যে, ফেইসবুক ওভারপপুলেটেড হয়ে গেছে, অনেক ঝামেলা, নানান সমস্যা; তাই ফেইসবুক বন্ধ হয়ে যাবে। তবে, যদি আপনি পঁচিশ জনের কাছে ওই মেসেজটা পাঠান এবং ফেইসবুক তা বুঝতে পারে, তবেই আপনার একাউন্ট বেঁচে যাবে! বাহ! কি চমৎকার সল্যুশন। ফেইসবুক যদি তথ্যভান্ডারের চাপে ভারিই হয়ে যায়, তাহলে খামোখা তারা এই স্প্যামিংটা করবে কেন? এটা যাদের কাছে যাচ্ছে তাদের অর্ধেকও যদি পঁচিশ জনকে পাঠায় তা নিশ্চয়ই ফেইসবুক সার্ভারে কয়েক শতাংশ চাপ বৃদ্ধি করবে, তাই না? তাহলে যদি ফেইসবুক আসলেই বন্ধ করবার পরিকল্পনা করতো তারা 'Support Inbox' ব্যবহার করতো।
সে যাক। ফেইসবুক সম্পর্কে কিছু কথা বলে বুঝবার চেষ্টা করি আসুন।
ফেইসবুক সম্পর্কে কয়েকটা মজার তথ্য জানা যাকঃ
[এপ্রিল ৩, ২০১৭ পর্যন্ত পাওয়া]
এবার ফেইসবুকের ডেটা সেন্টার (তথ্যভান্ডার) সংক্রান্ত কিছু কথা শুনে আসিঃ
ফেইসবুকের তথ্যভান্ডার বা ডেটা সেন্টারগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিশালাকায় ভবনে নির্মিত। ২০১১ সালের এপ্রিলে অ্যামেরিকার ওরেগন প্রদেশের প্রিনভ্যালে শহরে ফেইসবুক তাদের প্রথম ডেটা সেন্টারটি স্থাপন করে। ফেইসবুক আজও বিশ্বব্যাপী তাদের সার্ভার নির্মাণ কাজে ব্যস্ত। এছাড়া অ্যামেরিকা এবং এর বাইরের সার্ভার প্রোভাইডারগুলোর কাছেও ফেইসবুক অতিরিক্ত সার্ভার স্পেস ইজারা নিয়ে থাকে। ইতোমধ্যে ফেইসবুক নর্থ ক্যারোলাইনার ফরেস্ট সিটি, সুইডেনের ল্যুলিয়া এবং আইওয়া প্রদেশের আলটুনাতে ডেটা সেন্টার স্থাপন করেছে। এছাড়াও টেক্সাসের ফোর্ট ওর্থে, আয়্যারল্যান্ডের ক্লুনিতে এবং নিউ মেক্সিকোর লস লুনাস গ্রামে ফেইসবুকের ডেটা সেন্টার নির্মাণের কাজ চলছে। সাম্প্রতিক ফেইসবুক জানিয়েছে ভার্জিনিয়ার অ্যাশবার্নে এবং সিঙ্গাপুরে কিছু ডেটা সেন্টার ইজারা নিয়েছে তারা। ফেইসবুকের একেকটি ডেটা সেন্টার ওয়ালমার্টের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি জায়গা জুড়ে অবস্থিত।
এখন পর্যন্ত ফেইসবুকের ডেটা সার্ভার কতগুলো তা স্পষ্ট নয়। তবে জুন ২০১০-এ ফেইসবুকের একটি টেকনিক্যাল প্রেজেন্টেশন থেকে জানা যায় তারা তখনই ৬০০০০ ডেটা সার্ভার ব্যবহার করতো। যার পরিমাণ ২০০৯-এ ছিল ৩০০০০ হাজার এবং ২০০৮-এ ছিল ১০০০০। এই ৬-৭ বছরে চাহিদার সাথে তুলনা করলে তা ২০০০০০ (দুই লক্ষ)-এর কম হবে বলে মনে হচ্ছে না! ২০১৪-১৫ হিসাব অনুযায়ী ফেইসবুক বছরে নেটওয়ার্কিং ইকুইপমেন্টের পেছনে গড়ে ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার! ভাবা যায়?! মার্কিন ডলার শুনলেই মনের অজান্তে ৮০ দিয়ে গুণ হয়ে যায় ক্যামনে জানি; ২৮০০০ কোটি টাকা! এর মানে ফেইসবুককে বলে কয়ে আমাদের পদ্মা সেতুটা করিয়ে নেওয়া যায়! ওদের এক বছরের নেটওয়ার্কিং বাবদ খরচ মাত্র) খরচ করে।
এতোগুলো তথ্য দিলাম এটা বোঝানোর জন্য যে, ফেইসবুক দিনকে দিন কতটা বড় হচ্ছে! তারা চাহিদার সাথে তাল মেলাতে ব্যস্ত। এবার আরেকটা বিষয় নিয়ে বলি।
ফেইসবুক প্ল্যাটফর্ম (Facebook Platform):
ফেইসবুক প্ল্যাটফর্ম বৃহত্তর অর্থে (ইংরেজিতে যাকে আমরা Umbrella Term বলি) ব্যবহৃত হয়। ২০১০ সালে চালু হওয়া এই ছাতার ছায়াতলে ফেইসবুক কিছু সেবা, সরঞ্জাম এবং পণ্য (Product) প্রদান করে থাকে। এর ভেতরেই আছে ফেইসবুক ডেভেলপার কনসোল। আছে গ্রাফ এপিআই (API), অথেনটিকেশন, নানাবিধ সোশ্যাল প্লাগইন; আছে ওপেন গ্রাফ প্রটোকল এবং আইফ্রেম। এক কথায় এগুলো ওয়েব এপ্লিকেশন নির্মাতাদের সহযোগিতা করবার জন্য এক প্রকার সরঞ্জাম ( Tools). সাম্প্রতিক ফেইসবুক Facebook Audience Network চালু করেছে যা বিজ্ঞাপণদাতাদের জন্য সহজলভ্য এবং নিম্ন খরচের বিজ্ঞাপন দিবার মাধ্যম। অ্যাপ্লিকেশন নির্মাতা এবং মোবাইল ওয়েব প্রকাশকদের জন্য এটি অর্থ উপার্জনের জন্য চমৎকার একটি উপায়। ব্যবহারকারীদের জন্য এটাকে নিত্য-নতুন পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়াল বলা যেতে পারে। এখান থেকে ফেইসবুক নিজে বিরাট অংকের অর্থ উপার্জন করে থাকে।
ফেইসবুকের আয়ের উৎস জানতে চাই?
এখানে তালিকা করে বলে দেই ফেইসবুক কীভাবে পয়সা উপার্জন করে থাকেঃ
এছাড়াও কিছু অ-বিজ্ঞাপনভিত্তিক ব্যবস্থা থেকেও ফেইসবুক আয় করে থাকে।
এতোবড় একটি ইনকর্পোরেটেড প্রতিষ্ঠান যেটি দিনের পর দিন চাহিদার সাথে তাল মেলাতে ব্যস্ত ও ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে সেবাপণ্যগুলো নির্মাণ করে যাচ্ছে এবং একই সাথে প্রতিবছর বিশাল পরিমাণ অর্থ আয় করে থাকে তারা শুধু শুধু 'Overpolulated' হবার কারণে সেবা বন্ধ করে দিতে পারে না। এই ওভারপপ্যুলেশনই তাদের আয়ের উৎস। তারা নিজেরাও চায় গুগলের থেকে বড় হতে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি প্রকৃতপক্ষে তাদের জন্য সুখ-সংবাদ!
......................................................................................................
এতদূর যারা পড়ে এসেছেন, তাদের একটা কথা বলি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে মাথায় রেখে এই ১৪ এপ্রিল, ২০১৭ থেকে বিশ্বব্যাপী ফেইক আইডি নিধন কর্মসূচী চালু করেছে ফেইসবুক। এর জন্য গত দু-তিনদিন থেকেই আশেপাশের অনেককেই দেখছি ঘাবড়ে যাচ্ছে একাউন্ট ডিজেবল হয়ে যাবার জন্য। আমার নিজেরও এই সমস্যা হয়েছিল মার্কিন নির্বাচন চলার সময়টায়। এটা একদিক থেকে ভালো উদ্যোগ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে দেখা যাবে বেশিরভাগ মানুষই ফেইসবুকের পলিসি সম্পর্কে জানি না। পলিসি ঠিকমত রক্ষা করে চললে একাউন্ট ক্লোজ বা ডিজেবল হবার কথা না।
যাই হোক, পরিচিত কারো (বা আপনার নিজের!) একাউন্টে যদি সমস্যা হয়, তবে এই ঠিকানায় (ক্লিক করুন) গিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি (জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকলে স্কুল/ কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড/ পাসপোর্ট ইত্যাদির ছবি) এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো দিলে একাউন্ট ফিরে পাবার কথা। ১-৩ দিন সময় লাগলেও লাগতে পারে। ( আমি নিজে ফিরে পেয়েছি সেসময়। গত কয়েক দিনে বেশ ক'জনের আইডি উদ্ধারও করেছি। )
শেষ তথ্যটা কিঞ্চিৎ মন খারাপ করে দিতে পারে। মানসিকভাবে সুস্থ থাকবার জন্য সাইকোলজিস্টরা ফেইসবুক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে বলেছেন! :P
মঙ্গল হোক সবার।
তথ্যসূত্রঃ
ব্লগ | হিউম্যানস অব ঠাকুরগাঁও-এ প্রকাশিত সকল লেখা এবং মন্তব্যের দায় লেখক-ব্লগার ও মন্তব্যকারীর। কোন ব্লগপোস্ট এবং মন্তব্যের দায় কোন অবস্থায় 'ব্লগ | হিউম্যানস অব ঠাকুরগাঁও' কর্তৃপক্ষ বহন করবে না
মির কায়সার
April 17, 2017 09:52 AM , ৫ বছর পূর্বেApr 17, 2017 01:51 PM , ৫ বছর পূর্বে