বিবেকহীনতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সম্ভাব্য অনুপ্রেরণা
বর্তমান সম্পর্কগুলোর শুরুটাও ঠুনকো। বিয়ের আগে কিংবা বিয়ের পরের হোক, সবার উদ্দেশ্যে নঞর্থকতাই বেশি। মানুষ লোভের বিষে প্রলোভিত হয়ে নিজেই নিজের জীবনকে শেষ করতে অনুপ্রেরণা তৈরি করে যাচ্ছে অথচ বুঝতে পারেনা! যেন "বিবেক" শুধুমাত্র একটা শব্দ যা অভিধান থেকেও এখন বিলুপ্তপ্রায়।
যারা প্লেটোর মতবাদ সম্পর্কে ধারণা রাখেন, অনেকেই মানবেন যে তাঁর পরিকল্পনাগুলো অবাস্তব ছিলো। কিন্তু আমার মনে হয় যে, হয়তো সেই নিয়ম মেনে চললেই মানবজাতি আরো নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারতো।
বিভিন্ন চলচিত্র, গল্প, উপন্যাস পড়ে আমরা এটাই মানি যে জীবনে সীমালঙ্ঘন করতেই হবে নয়তো জীবন বুঝা যাবেনা, এই সত্যিও আমি স্বীকার করি কিন্তু ব্যাপারটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই এখনকার সংঘর্ষগুলোর জন্য দায়ী। উদাহরণ দিয়ে বলি...
ভেরোনিকা রথ তার রচিত "দ্যা ডাইভারজেন্ট ট্রিলজি"তে মানুষের কিছু স্বভাব এবং সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বেশ সহজ কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেমন- একটা উদার মনের মানুষ যে নিজের স্বার্থ্যের আগে পরেরটা নিয়ে ভাববে কিংবা কোনো শান্তিপ্রিয় মানুষ যে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলে, তার এই স্বভাবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুযায়ী সে হবে নিম্ন আত্মসম্মানের অধিকারী। যেই মানুষটা পরম সত্যবাদী কিংবা অতি সাহসী, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে নিষ্ঠুরতা কারণ যে কোনো ক্ষেত্রেও মিথ্যা বলবে না তার দ্বারা পরিস্থিতি বিগড়ার সম্ভাবনাও ৯৯.৯% আর যে অতি সাহসী, সে যেকোনো ক্ষেত্রেই ভয় পাবেনা যেটার কারণে তার পেশাদার খুনি হওয়াও অসম্ভব কিছুনা। যারা জ্ঞানে ভরপুর এবং এই আবেশেই নিজেকে জড়িয়ে রাখে, তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে থাকে অহংকার।
তো, যখন আমরা স্বাভাবিকের বাইরে চরম পর্যায়ের কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হই, তখন কোথাও না কোথাও লুপ রেখে দেই খারাপ কোনো পরিণামের! এই যে এতো যুদ্ধ, ধর্ষণ, বৈষম্যতা, বিবাহবিচ্ছেদ- চিন্তা করে দেখলে কিন্তু দায়ী আমাদের বিবেকের অপব্যবহারই।
"টাকা" আর "কাম" এর উপর ভিত্তি করেই যেন মানুষের কর্মকাণ্ডগুলো গঠিত। আমি বলছি না, সবাই এমন কিন্তু অধিকাংশই এমন হওয়ায় পৃথিবী এতোটা দুর্নীতিগ্রস্থ! ছোটখাটো বিষয়গুলাতেও যদি আমরা সীমাস্থ থাকতাম তাহলে বড় মাপের ভুল সিদ্ধান্তগুলোর হয়তো দেখাও মিলতো না বা মিললেও বর্তমান অপেক্ষা কম জটিল হতো। আর প্রথমেই কড়া পদক্ষেপ না নেওয়ায়, তা এখন নিলে নৈতিকতার প্রসার আশা করা যায়!
এজন্যে প্লেটোর কথা উল্লেখিত উপরে। দ্যা রিপাবলিকে তিনি লিখেছিলেন “কেহ নিতান্ত প্রয়োজনীয়তার অতিরিক্ত কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিক হইতে পারিবে না; দ্বিতীয়, কাহারও এমন কোনো বাসগৃহ বা গোলাবাড়ি থাকিবে না যাহা অন্যদের জন্য অবারিত দ্বার নহে- ক্ষেত্রে অবস্থানের সময় যেমন করিয়া থাকে, তদ্রুপই তাহারা সকলে একত্রে বাস করিবে এবং একই অন্ন গ্রহণ করিবে- নগরে একমাত্র তাহারাই স্বর্ণ বা রৌপ্য সম্পর্কিত কোনো ধরনের লেনদেন করিতে সাহস করিবে না। এমনকি ঐসব মূল্যবান বস্তু স্পর্শ করিবে না অথবা ঐসব বস্তুর সাহিত একই গৃহে অবস্থান করিবে না।”
অবাস্তব এবং অসম্ভব হলেও এই নিয়মগুলো মানা গেলে টাকা ঘিরে মানুষের যত নঞর্থকতা, তা বর্জন করা যেত!
বাকি থাকে "কাম"। প্লেটোনিক কিংবা নিষ্কাম প্রেম সম্পর্কে প্রায় সবারই ধারণা আছে। এটি এমন একটি অনুরক্ত সম্পর্ক যার মধ্যে যৌন উপাদান প্রবেশ না। মূলত বিবাহপূর্বে ভালোবাসার কারণ দর্শিয়ে যেসব সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাতে এই নিষ্কাম মনোভাবটা বিরল। আর তাইজন্যেই মানুষ সীমা অতিক্রম করাকে কোনো সমস্যাই মনে করেনা। তারপর একটা সময় পর বিচ্ছেদ সহজে মেনে নিলে এখান থেকে শুরু আরেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার। বিবাহপূর্বেই যখন সম্পর্কের গুরুত্ব বুঝা হবেনা, তাহলে নিশ্চয়তা কী যে পরে তা টিকবে? কিছু ক্ষেত্রে ডিভোর্স নাহয় অনিবার্য হয়ে যায় কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশের যে অবস্থা, সেটা প্রথম থেকেই সম্পর্কের ব্যাপারে সচেতন না থাকার পরিণাম ছাড়া আর কিছু না! তাই, শুরুতেই যদি চাওয়াগুলো ঠোঁটে চুমুর বদলে কপালে চুমুতে সীমাবদ্ধ থাকায় সন্তুষ্টি বেছে নেয়, তাহলে শেষপর্যন্ত আশা করাই যায় যে-
মানুষগুলো তো বেঁচে থাকবেই, সাথে বেঁচে থাকবে তাদের ভালো থাকার ভালো রাখার অনুপ্রেরণারা।
ব্লগ | হিউম্যানস অব ঠাকুরগাঁও-এ প্রকাশিত সকল লেখা এবং মন্তব্যের দায় লেখক-ব্লগার ও মন্তব্যকারীর। কোন ব্লগপোস্ট এবং মন্তব্যের দায় কোন অবস্থায় 'ব্লগ | হিউম্যানস অব ঠাকুরগাঁও' কর্তৃপক্ষ বহন করবে না
একলব্য শুন্যতা
March 14, 2017 02:14 PM , ৬ বছর পূর্বেMar 14, 2017 06:25 PM , ৬ বছর পূর্বে
Mar 15, 2017 01:51 PM , ৬ বছর পূর্বে
Mar 15, 2017 05:48 PM , ৬ বছর পূর্বে