এই মুহূর্তে আমরা বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কবলে রয়েছি। SARS-CoV-2 নামক এই সুপারস্প্রেডারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত স্বীকৃত করণীয় প্রত্যেকের সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা। প্রতিকারের কোনো উপায় এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। এসকল বিষয়ে আমরা সবাই একটু আধটু জানি। তবে আরো কিছু বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন বলেই আমি মনে করি। নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আলোচনা করবো এই লেখায়।
ব্যক্তিগত সঙ্গনিরোধ (হোম কোয়ারেন্টাইন) এবং আবেগীয় বিপাক
আমরা সকলেই জানি, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বয়স্ক ব্যক্তি, দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষম ব্যক্তি এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি মারাত্মক হতে পারে। স্বভাবতই বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিদের নিয়ে সবাই চিন্তিত। অন্যদিকে পরস্পরকে স্পর্শ করা আমাদের দেশ এবং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ একই সাথে আমাদেরও নিত্যকার অভ্যাস। এই মুহূর্তে এসব অভ্যাস ত্যাগ করা বাঞ্ছনীয় হলেও আমরা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে নানা রকম বাধার সম্মুখীন হতে পারি। সেসব থেকে প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
তথ্য, ভুল তথ্য এবং গুজব
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধকল্পে সকলেই ইচ্ছুক। কিন্তু সৎ উদ্দেশ্য থাকার পরেও কখন আমরা মানুষের ক্ষতির কারণ হচ্ছি তা নিজেরাও বুঝতে পারছি না। আশা করি নিচের কাজগুলো করলে আমরা ভুল তথ্য এবং গুজব ছড়ানো থেকে বেঁচে যেতে পারবো।
গত কয়েক দিনে ফেইসবুকে বেশ কিছু প্রেস্ক্রিপশান চোখে পড়েছে। কোনোটায় কোনো একজন চিকিৎসককে উল্লেখ করা, কোনোগুলো নাম পরিচয় বিহীন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বাসায় বিচ্ছিন্ন থেকে চিকিৎসা করার ব্যবস্থা থাকা জরুরি, যেহেতু জনসংখ্যার তুলনায় আমাদের হাসপাতাল এবং ডাক্তার অপ্রতুল। কিন্তু উপকার করতে গিয়ে আমরা যেন কারো ক্ষতি ডেকে না আনি সেই বিষয়ে সচেতন থাকি। একটা বিষয় আমাদের মনে রাখা উচিত, উপযুক্ত সোর্স বিহীন তথ্য ভুল তথ্যের সমতুল্য।
স্বেচ্ছাসেবক
আমাদের দেশের চিকিৎসক স্বল্পতা, দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামো, অসচেতনতা ইত্যাদি সমস্যা মোকাবেলার জন্য এই মুহূর্তে স্বেচ্ছাসেবকরা গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁরা দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। অনেকেই হয়তো বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশান সম্পর্কে জানি। তাঁরা চিকিৎসকদের জন্য PPE (personal protective equipment) বানাচ্ছেন, গনপরিবহন এবং জনবহুল স্থানসমূহে জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন, নিম্নবিত্তদের আহারের ব্যবস্থা করছেন যারা অর্থনৈতিক সংকটে আছেন। আমরা সাধ্যমত তাদের সহায়তা করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট এর শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ "ফাইট ফর লাইফ" প্রজেক্ট এর মাধ্যমে তাঁদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিতে পারেন।(https://bit.ly/2Uxhu9o)
ঠাকুরগাঁও-এ বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন মানুষকে সচেতন করতে। আমরা তাঁদের দিকে হাত বাড়াই যেন করোনা প্রতিরোধে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সফল হয়। নিম্নবিত্ত মানুষের আহারের ব্যবস্থা করতে আমরা হাত বাড়াই। বিপদসঙ্কুল এই সময়ে আমরা যেন মানবিকতা হারিয়ে না ফেলি।
কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এবং সঙ্গ রোধ
সম্প্রতি এই শব্দগুলো অহরহ ব্যবহার হলেও আমরা সকলে এর সঠিক প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন নই।
কোয়ারেন্টাইন (quarantine): শব্দটির বাংলা অর্থ সঙ্গরোধ। SARS-CoV-2 দ্বারা সংক্রমিত হইয়েছেন এরকম আশঙ্কা থাকলে কোনো ব্যক্তির ১৪ দিন অন্যদের সংস্পর্শ থেকে পৃথক থাকা হল কোয়ারেন্টাইন। সংক্রমিত হয়েছেন এরকম আশঙ্কা না থাকলেও সাবধানতা সূচক পৃথক থাকাকে সাবধানতা সূচক সঙ্গরোধ/ কোয়ারেন্টাইন বলা যেতে পারে। তবে এই বিষয়ে আমাদের সম্যক ধারণা নেই। এই ভিডিওটি সহায়ক হতে পারে। (https://bit.ly/39bvScA)
আইসোলেশন(isolation): এই শব্দের বাংলা অর্থ বিচ্ছিন্নতা। পরীক্ষিত করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি আইসোলেশনে থাকবেন রোগমুক্তি পর্যন্ত। যেহেতু আমাদের দেশে পর্যাপ্ত টেস্ট কিট(করোনা সনাক্তকরণ সামগ্রী) নেই, তাই লক্ষণগুলো দেখা গেলে আমরা মানুষের সংস্পর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাবো। সম্ভব হলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষা করবো। জরুরি প্রয়োজন হলে হাসপাতালে যাবো।
উপরোক্ত সকল আলোচনা আমার ব্যক্তিগত অভিমত এবং করোনা সম্পর্কে আমার জানা তথ্যের সমষ্টিমাত্র। আমি স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্ট কেউ নই। কোনো তথ্য ভুল হলে কিংবা অসম্পুর্ণ হলে অথবা প্রয়োজনীয় কিছু যোগ করার থাকলে নির্দ্বিধায় জানাবেন।
ভালো থাকুন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন।
ধন্যবাদ।
ব্লগ | হিউম্যানস অব ঠাকুরগাঁও-এ প্রকাশিত সকল লেখা এবং মন্তব্যের দায় লেখক-ব্লগার ও মন্তব্যকারীর। কোন ব্লগপোস্ট এবং মন্তব্যের দায় কোন অবস্থায় 'ব্লগ | হিউম্যানস অব ঠাকুরগাঁও' কর্তৃপক্ষ বহন করবে না