লিখেছেনঃ
2023-06-02+0606:44 “আমি ছেলেকে আমার সামনে গুলি করতে দেখলাম। সে পড়ে গেল আর আমি তাঁকে ধরে ছিলাম। আমি বেঁচে যাই, সম্ভবত ঘাতকরা মনে করেছিল আমরা দুজনই মারা গিয়েছি”, বলছিলেন প্যাসক্যালিনা, একজন পলাতক। “তারা আমার বোনকে ধরে নিয়ে যায় এবং ধ্বংস করে,”- বলছিলেন আনইয়র, একজন মা যিনি তার নয়জন সন্তান নিয়ে ঝোপে লুকিয়ে ছিলেন যখন ঘাতকরা তার গ্রামে আক্রমণ করে এবং সব পুরুষদের খুঁজে মেরে ফেলতে থাকে। এরপর তারা সব মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায় এবং মেয়েদের ধরে নিয়ে যায়। এটা দক্ষিণ সুদানের গল্প। সুদানের মুসলিম শাসনে তারা সুখী ছিল না। আলাদা হতে চেয়েছিল। স্বভাবতই অ-মুসলিম এবং মুসলিম শাসন থেকে পৃথক হওয়ার লড়াইয়ে আমেরিকা তাদের সমর্থন দেয়। এর স্বাধীনতা পাওয়ার পর বাকিটা ইতিহাস। এরপর থেকে শুরু ‘টিপিক্যাল অ্যাফ্রিকান থিংস”। ইথিনিক কনফ্লিক্ট, জাতিগত সহিংসতা। দক্ষিণ সুদান, বিশ্বের নতুনতম দেশ, যা বর্তমানে একটি জুজু ধাঁধার মতন যাকে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এটা আবার একসঙ্গে করা সহজ নয়। অর্ধ শতাব্দীর উন্মুক্ত বিদ্রোহের পর ২০০৫ সালে এক শান্তিচুক্তির পর ২০১১ সালে এটি সুদান থেকে পৃথক হয়। একটি গণভোটে ৯৯% দক্ষিণ সুদানের জনগণ, (বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ এবং অমুসলিম) আরব ও মুসলিমদের থেকে পৃথক করার পক্ষে ভোট দেয়। দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার পরপরই দক্ষিণ সুদানের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় যা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। ২০১৩ সালে গৃহযুদ্ধ পুরোপুরি শুরু হয় যখন প্রেসিডেন্ট সালভা কির, যিনি একজন দিনকা/Dinka, ভাইস-প্রেসিডেন্ট রেক মাছার কে পদচ্যুত করেন, যিনি একজন নুইয়ের। ২০১৬ সালে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি ৪ মাস স্থায়ী হয়। জুবায় একটি বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে এটির সমাপ্তি ঘটে এবং রেক মাছার দক্ষিণ আফ্রিকায় পলায়ন করেন, যেখানে তাঁকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। হানাহানি এখন অনেক দিকেই। অন্যান্য উপজাতি (দেশের প্রায় ৬০ টি) অভিযোগ করে প্রেসিডেন্ট কির, সরকারি চাকরি তার গোষ্ঠিকে বেছে দেয় এবং তার দিনকা জাতিগোষ্ঠিকে অর্থ প্রদান করে, এবং দিনকাদের ক্ষমতাশালী করার জন্য রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী ব্যবহার করে। আতঙ্কিত গোষ্ঠীগুলো (দিনকা বাদে) তাদের বাড়িঘর, ভূমি ও গৃহপালিত পশু - রক্ষার জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে এবং কখনও কখনও প্রতিবেশী গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালায়। সরকার এই গোষ্ঠীগুলোকেই বিদ্রোহী হিসেবে দেখে, যাদের নির্মুল করতে হবে এবং সরকার সমর্থিত যেসব অঞ্চলে এদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে সেখানে সমর্থন দেয় সরকার। সকল পক্ষই আবার বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে। উয়াওতে, দিনকারা নির্ভীকভাবে চলাফেরা করে (শুধু রাত ছাড়া, যখন ডাকাতেরা চলাফেরা করে)। এদিকে আবার, হাজার হাজার অন্যান্য গোষ্ঠীর সদস্যরা আশেপাশে তাবুর নিচে ক্যাম্পে রাত্রিযাপন করে, যেগুলো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা পাহাড়া দেয়। তারা বলে যে তারা বাড়িতে ফেরার জন্য খুব ভীত। অনেকেই রিপোর্ট করেছে যে, জ্বালানী সংগ্রহ করার জন্য যদি তারা বের হয় তবে তারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। "এখন ব্যাপার হচ্ছে যারা দিনকা নয় তাদের জন্য এটা মৃত্যু, যদি আপনি দিনকাদের মত কথা বলতে না পারেন, যদি আপনার দিনকাদের মত সঠিক চিহ্ন না থাকে, তারা আপনাকে গুলি করবে, কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার সুযোগ দিবে না”, আব্দুল্লাহ নামের একজন কৃষক বলেন। "তারা অন্যান্য গোষ্ঠীগুলিকে মির্মুল করতে এবং সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। তারা তোমাকে মেরে ফেলবে এবং তোমার জমিতে তাদের গবাদি পশু চড়াবে।" যুদ্ধের আগের ১২ মিলিয়নের মধ্যে ২ মিলিয়ন মানুষ দেশের মধ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ বিদেশে পালিয়ে গিয়েছে। সংঘাত এতই তীব্র যে অনেকেই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র অথবা সুদানের সংঘাতপূর্ণ এলাকা দারফুর এ পালিয়ে গিয়েছে। যদিও দক্ষিণ সুদানের ভূমি উর্বর, তারপরো এর প্রায় অর্ধেক মানুষ দুর্ভিক্ষে ভুগছে। খাদ্য সাহায্যের ফলে এ বছরে একটি দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা পায় দক্ষিণ সুদান। কালা-আজার (মাছি দ্বারা পরিচালিত একটি মারাত্মক পরজীবী রোগ) ডায়রিয়া, কলেরা এবং ম্যালেরিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অর্থনীতি আরেকটি দুর্যোগ। রাষ্ট্র তেলের উপর নির্ভরশীল, যা মোট রপ্তানির ৯৫%। ২০১১ সাল থেকে তেলের দাম শুধু অর্ধেকেরও বেশি কমেনি, বরং তেলের উৎপাদনও কমেছে যুদ্ধের ফলে। আইএমএফ ধারণা করছে যে ২০১৩ সাল থেকেই প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছে। পুরো বছরে মুদ্রাস্ফীতি ৩০০%। সরকারের হাতে নগদ অর্থ প্রায় নেই বললেই চলে। বেতন না দেয়া সৈন্যরা শাস্তি ছাড়াই দমন-পীড়নের মাধ্যমে বেসামরিক নাগরিকদের লুট করে। বাজেটের বেশিরভাগ চুরি করা হয়। অদ্ভুতভাবে সরকারের অর্ধেক তেলের রাজস্বের অর্থ পেট্রোলের ভর্তুকিতে ব্যয় করা হয় - সরকার বলছে যে জ্বালানির মূল্যের চেয়ে তা কম দামে বিক্রি করা উচিত। ফলস্বরূপ, পেট্রল স্টেশনগুলি শুকিয়ে মরছে। এর বাইরে, কালো-বাজার ব্যবসায়ীরা পানির বোতলে সরকারি মূল্যের চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি দামে তেল বিক্রি করছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি ভর্তুকি বাতিল করা উচিত, কিন্তু যারা পকেটে এসব পুরছে তাদের থেকে বাঁধা আসছে। সরকার বলেছে যে দক্ষিণ সুদানের জনসাধারণের সেবা প্রদান করে এমন বিদেশী সাহায্য গোষ্ঠীকে তারা স্বাগত জানায়। কিন্তু বাস্তবে কর্মকর্তারা প্রায়ই তাদের বাঁধা দেয়। সাহায্যকারীদের নিয়মিতভাবে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ করতে বাধা দেয়া হয়। হত্যা করা হয়েছে অনেককেই। অনেক রাস্তাই বিপদজনক কারণ বন্দুকধারীরা ঘুরে বেড়ায়, সাহায্য সামগ্রী চুরি করে তারা এবং চালকদের হত্যা করে। আমলারা ক্রমাগত নতুন ফি এবং পারমিট দাবি করে। প্রেসিডেন্ট কিরের সরকার আন্তর্জাতিক শুভেচ্ছার মধ্য দিয়ে অফিসে এসেছিলেন। বুশ ও ওবামার উভয় প্রশাসনই খুশি ছিল এবং নিঃসন্দেহে যেসব বিদ্রোহীরা যারা খার্তুমের ইসলামী শাসন থেকে দক্ষিণ সুদানকে মুক্ত করেছিল তাঁদের উপর খুশি ছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের এমন কোন ধরনের অনুভূতিপূর্ণ সম্পর্ক নেই এবং আমেরিকা দ্রুতই প্রেসিডেন্ট কিরের উপর ভরসা ও ধৈর্য হারাচ্ছে। দুর্নীতির অভিযোগে দক্ষিণ সুদানের ৩ জন সরকারি কর্মকর্তা আমেরিকার ট্রেজারি কর্তৃক নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে। আরও অনেকেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসছেন শীঘ্রই। গত সেপ্টেম্বরে, ইউএসএআইডি’র প্রধান ,আর্ক গ্রিন দক্ষিণ সুদান পরিদর্শন করেন। জনাব কির তাকে বলেন যে সেখানে কোন নিয়মিত সংঘাত ও নিরাপত্তাহীনতা নেই, যেসব সংঘাত হচ্ছে তা বিরোধীদের চক্রান্ত, সাহায্যকারী সংগঠনগুলো কোন ক্ষতি ছাড়াই কাজ করতে পারবে। কিরের এমন খোলামেলা মিথ্যা কথা বলায় মার্ক গ্রিন বিস্মিত হন। তিনি দক্ষিণ সুদানে আমেরিকার নীতির সম্পূর্ণ "সম্পূর্ণ পর্যালোচনা"র প্রতিশ্রুতি দেন। এই হচ্ছে বর্তমানে দক্ষিণ সুদানের অবস্থা। আমেরিকা এবং তার সহযোগীরা দক্ষিণ সুদানের আলাদা হওয়ার বিদ্রোহকে সমর্থন দিয়েছিল কারণ তারা একটি মুসলিম শাসন থেকে আলাদা হতে চেয়েছিল অথচ আন্তর্জাতিক রাজনীতির খপ্পরে পড়ে উল্টো বিপদে পড়ল উল্টো দক্ষিণ সুদানই। অন্যদিকে চমৎকারভাবে এগিয়ে চলেছে সুদান। ১৯৯৭ সালে সন্ত্রাসের জন্য সুদানকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এনেছিলেন। কিন্তু পজেটিভ অ্যাকশন নেয়ায় ১২ অক্টোবর থেকে সুদানের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার শুরু হয়। যদিও সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্ট থেকে গণহত্যার অভিযোগে এখনো ‘ওয়ান্টেড’। সুদানের স্থানীয় পত্রিকাগুলো বলছে যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো সুদানে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর সুদানের বিমান, বোয়িং ও এয়ারবাস থেকে খুচরা যন্ত্রপাতি কিনতে পারবে। সুদানের মুদ্রার মান কমে গিয়েছে যদিও সরকার বলছে তারা এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসবে, এ ব্যাপারে তারা আশাবাদী। এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর থেকে তাদের মুদ্রামান বৃদ্ধি পাওয়া সুদানের সুদিনেরই ইঙ্গিত দেয়। কৃতজ্ঞতাঃ  The Economist October 14, 2017 ৬২৮ ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭ ০৩:০১ পূর্বাহ্ন ৫ বছর পূর্বে

“আমি ছেলেকে আমার সামনে গুলি করতে দেখলাম। সে পড়ে গেল আর আমি তাঁকে ধরে ছিলাম। আমি বেঁচে যাই, সম্ভবত ঘাতকরা মনে করেছিল আমরা দুজনই মারা গিয়েছি”, বলছিলেন প্যাসক্যালিনা, একজন পলাতক। “তারা আমার বোনকে ধরে নিয়ে যায় এবং ধ্বংস করে,”- বলছিলেন আনইয়র, একজন মা যিনি তার নয়জন সন্তান নিয়ে ঝোপে লুকিয়ে ছিলেন যখন ঘাতকরা তার গ্রামে আক্রমণ করে এবং সব পুরুষদের খুঁজে মেরে ফেলতে থাকে। এরপর তারা সব মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায় এবং মেয়েদের ধরে নিয়ে যায়।

এটা দক্ষিণ সুদানের গল্প। সুদানের মুসলিম শাসনে তারা সুখী ছিল না। আলাদা হতে চেয়েছিল। স্বভাবতই অ-মুসলিম এবং মুসলিম শাসন থেকে পৃথক হওয়ার লড়াইয়ে আমেরিকা তাদের সমর্থন দেয়। এর স্বাধীনতা পাওয়ার পর বাকিটা ইতিহাস। এরপর থেকে শুরু ‘টিপিক্যাল অ্যাফ্রিকান থিংস”। ইথিনিক কনফ্লিক্ট, জাতিগত সহিংসতা।

দক্ষিণ সুদান, বিশ্বের নতুনতম দেশ, যা বর্তমানে একটি জুজু ধাঁধার মতন যাকে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এটা আবার একসঙ্গে করা সহজ নয়। অর্ধ শতাব্দীর উন্মুক্ত বিদ্রোহের পর ২০০৫ সালে এক শান্তিচুক্তির পর ২০১১ সালে এটি সুদান থেকে পৃথক হয়। একটি গণভোটে ৯৯% দক্ষিণ সুদানের জনগণ, (বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ এবং অমুসলিম) আরব ও মুসলিমদের থেকে পৃথক করার পক্ষে ভোট দেয়। দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার পরপরই দক্ষিণ সুদানের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় যা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।

২০১৩ সালে গৃহযুদ্ধ পুরোপুরি শুরু হয় যখন প্রেসিডেন্ট সালভা কির, যিনি একজন দিনকা/Dinka, ভাইস-প্রেসিডেন্ট রেক মাছার কে পদচ্যুত করেন, যিনি একজন নুইয়ের। ২০১৬ সালে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি ৪ মাস স্থায়ী হয়। জুবায় একটি বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে এটির সমাপ্তি ঘটে এবং রেক মাছার দক্ষিণ আফ্রিকায় পলায়ন করেন, যেখানে তাঁকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।

হানাহানি এখন অনেক দিকেই। অন্যান্য উপজাতি (দেশের প্রায় ৬০ টি) অভিযোগ করে প্রেসিডেন্ট কির, সরকারি চাকরি তার গোষ্ঠিকে বেছে দেয় এবং তার দিনকা জাতিগোষ্ঠিকে অর্থ প্রদান করে, এবং দিনকাদের ক্ষমতাশালী করার জন্য রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী ব্যবহার করে। আতঙ্কিত গোষ্ঠীগুলো (দিনকা বাদে) তাদের বাড়িঘর, ভূমি ও গৃহপালিত পশু - রক্ষার জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে এবং কখনও কখনও প্রতিবেশী গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালায়। সরকার এই গোষ্ঠীগুলোকেই বিদ্রোহী হিসেবে দেখে, যাদের নির্মুল করতে হবে এবং সরকার সমর্থিত যেসব অঞ্চলে এদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে সেখানে সমর্থন দেয় সরকার। সকল পক্ষই আবার বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে।

উয়াওতে, দিনকারা নির্ভীকভাবে চলাফেরা করে (শুধু রাত ছাড়া, যখন ডাকাতেরা চলাফেরা করে)। এদিকে আবার, হাজার হাজার অন্যান্য গোষ্ঠীর সদস্যরা আশেপাশে তাবুর নিচে ক্যাম্পে রাত্রিযাপন করে, যেগুলো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা পাহাড়া দেয়। তারা বলে যে তারা বাড়িতে ফেরার জন্য খুব ভীত। অনেকেই রিপোর্ট করেছে যে, জ্বালানী সংগ্রহ করার জন্য যদি তারা বের হয় তবে তারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। "এখন ব্যাপার হচ্ছে যারা দিনকা নয় তাদের জন্য এটা মৃত্যু, যদি আপনি দিনকাদের মত কথা বলতে না পারেন, যদি আপনার দিনকাদের মত সঠিক চিহ্ন না থাকে, তারা আপনাকে গুলি করবে, কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার সুযোগ দিবে না”, আব্দুল্লাহ নামের একজন কৃষক বলেন। "তারা অন্যান্য গোষ্ঠীগুলিকে মির্মুল করতে এবং সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। তারা তোমাকে মেরে ফেলবে এবং তোমার জমিতে তাদের গবাদি পশু চড়াবে।"

যুদ্ধের আগের ১২ মিলিয়নের মধ্যে ২ মিলিয়ন মানুষ দেশের মধ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ বিদেশে পালিয়ে গিয়েছে। সংঘাত এতই তীব্র যে অনেকেই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র অথবা সুদানের সংঘাতপূর্ণ এলাকা দারফুর এ পালিয়ে গিয়েছে। যদিও দক্ষিণ সুদানের ভূমি উর্বর, তারপরো এর প্রায় অর্ধেক মানুষ দুর্ভিক্ষে ভুগছে। খাদ্য সাহায্যের ফলে এ বছরে একটি দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা পায় দক্ষিণ সুদান। কালা-আজার (মাছি দ্বারা পরিচালিত একটি মারাত্মক পরজীবী রোগ) ডায়রিয়া, কলেরা এবং ম্যালেরিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

অর্থনীতি আরেকটি দুর্যোগ। রাষ্ট্র তেলের উপর নির্ভরশীল, যা মোট রপ্তানির ৯৫%। ২০১১ সাল থেকে তেলের দাম শুধু অর্ধেকেরও বেশি কমেনি, বরং তেলের উৎপাদনও কমেছে যুদ্ধের ফলে। আইএমএফ ধারণা করছে যে ২০১৩ সাল থেকেই প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছে। পুরো বছরে মুদ্রাস্ফীতি ৩০০%। সরকারের হাতে নগদ অর্থ প্রায় নেই বললেই চলে। বেতন না দেয়া সৈন্যরা শাস্তি ছাড়াই দমন-পীড়নের মাধ্যমে বেসামরিক নাগরিকদের লুট করে।

বাজেটের বেশিরভাগ চুরি করা হয়। অদ্ভুতভাবে সরকারের অর্ধেক তেলের রাজস্বের অর্থ পেট্রোলের ভর্তুকিতে ব্যয় করা হয় - সরকার বলছে যে জ্বালানির মূল্যের চেয়ে তা কম দামে বিক্রি করা উচিত। ফলস্বরূপ, পেট্রল স্টেশনগুলি শুকিয়ে মরছে। এর বাইরে, কালো-বাজার ব্যবসায়ীরা পানির বোতলে সরকারি মূল্যের চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি দামে তেল বিক্রি করছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি ভর্তুকি বাতিল করা উচিত, কিন্তু যারা পকেটে এসব পুরছে তাদের থেকে বাঁধা আসছে।

সরকার বলেছে যে দক্ষিণ সুদানের জনসাধারণের সেবা প্রদান করে এমন বিদেশী সাহায্য গোষ্ঠীকে তারা স্বাগত জানায়। কিন্তু বাস্তবে কর্মকর্তারা প্রায়ই তাদের বাঁধা দেয়। সাহায্যকারীদের নিয়মিতভাবে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ করতে বাধা দেয়া হয়। হত্যা করা হয়েছে অনেককেই। অনেক রাস্তাই বিপদজনক কারণ বন্দুকধারীরা ঘুরে বেড়ায়, সাহায্য সামগ্রী চুরি করে তারা এবং চালকদের হত্যা করে। আমলারা ক্রমাগত নতুন ফি এবং পারমিট দাবি করে।

প্রেসিডেন্ট কিরের সরকার আন্তর্জাতিক শুভেচ্ছার মধ্য দিয়ে অফিসে এসেছিলেন। বুশ ও ওবামার উভয় প্রশাসনই খুশি ছিল এবং নিঃসন্দেহে যেসব বিদ্রোহীরা যারা খার্তুমের ইসলামী শাসন থেকে দক্ষিণ সুদানকে মুক্ত করেছিল তাঁদের উপর খুশি ছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের এমন কোন ধরনের অনুভূতিপূর্ণ সম্পর্ক নেই এবং আমেরিকা দ্রুতই প্রেসিডেন্ট কিরের উপর ভরসা ও ধৈর্য হারাচ্ছে। দুর্নীতির অভিযোগে দক্ষিণ সুদানের ৩ জন সরকারি কর্মকর্তা আমেরিকার ট্রেজারি কর্তৃক নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে। আরও অনেকেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসছেন শীঘ্রই।

গত সেপ্টেম্বরে, ইউএসএআইডি’র প্রধান ,আর্ক গ্রিন দক্ষিণ সুদান পরিদর্শন করেন। জনাব কির তাকে বলেন যে সেখানে কোন নিয়মিত সংঘাত ও নিরাপত্তাহীনতা নেই, যেসব সংঘাত হচ্ছে তা বিরোধীদের চক্রান্ত, সাহায্যকারী সংগঠনগুলো কোন ক্ষতি ছাড়াই কাজ করতে পারবে। কিরের এমন খোলামেলা মিথ্যা কথা বলায় মার্ক গ্রিন বিস্মিত হন। তিনি দক্ষিণ সুদানে আমেরিকার নীতির সম্পূর্ণ "সম্পূর্ণ পর্যালোচনা"র প্রতিশ্রুতি দেন।

এই হচ্ছে বর্তমানে দক্ষিণ সুদানের অবস্থা। আমেরিকা এবং তার সহযোগীরা দক্ষিণ সুদানের আলাদা হওয়ার বিদ্রোহকে সমর্থন দিয়েছিল কারণ তারা একটি মুসলিম শাসন থেকে আলাদা হতে চেয়েছিল অথচ আন্তর্জাতিক রাজনীতির খপ্পরে পড়ে উল্টো বিপদে পড়ল উল্টো দক্ষিণ সুদানই। অন্যদিকে চমৎকারভাবে এগিয়ে চলেছে সুদান। ১৯৯৭ সালে সন্ত্রাসের জন্য সুদানকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এনেছিলেন। কিন্তু পজেটিভ অ্যাকশন নেয়ায় ১২ অক্টোবর থেকে সুদানের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার শুরু হয়। যদিও সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্ট থেকে গণহত্যার অভিযোগে এখনো ‘ওয়ান্টেড’। সুদানের স্থানীয় পত্রিকাগুলো বলছে যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো সুদানে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর সুদানের বিমান, বোয়িং ও এয়ারবাস থেকে খুচরা যন্ত্রপাতি কিনতে পারবে। সুদানের মুদ্রার মান কমে গিয়েছে যদিও সরকার বলছে তারা এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসবে, এ ব্যাপারে তারা আশাবাদী। এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর থেকে তাদের মুদ্রামান বৃদ্ধি পাওয়া সুদানের সুদিনেরই ইঙ্গিত দেয়।

কৃতজ্ঞতাঃ 

The Economist

October 14, 2017


বিষয়ঃ আন্তর্জাতিক | ট্যাগসমূহঃ সমসাময়িক আন্তর্জাতিক [ ৬২৮ ] 628 [ ০ ] 0
  • শেয়ার করুনঃ
পাঠিয়ে দিনঃ

ব্লগারঃ আব্দুস সামী

ব্লগ লিখেছেনঃ ১৩ টি
ব্লগে যোগদান করেছেনঃ ৬ বছর পূর্বে

০ টি মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্য

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করবার জন্য আপনাকে লগইন করতে হবে।
ব্লগের তথ্য
মোট ব্লগারঃ ৬৮ জন
সর্বমোট ব্লগপোস্টঃ ৯৬ টি
সর্বমোট মন্তব্যঃ ১২২ টি


ব্লগ | হিউম্যানস অব ঠাকুরগাঁও-এ প্রকাশিত সকল লেখা এবং মন্তব্যের দায় লেখক-ব্লগার ও মন্তব্যকারীর। কোন ব্লগপোস্ট এবং মন্তব্যের দায় কোন অবস্থায় 'ব্লগ | হিউম্যানস অব ঠাকুরগাঁও' কর্তৃপক্ষ বহন করবে না